১। এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠা, আইন ও বিধিমালা:-
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন (২০০৫ সনের ১ নং আইন) ২০০৫ এর মাধ্যমে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) প্রতিষ্ঠা করা হয়। আইন অনুযায়ী এটি একটি সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ। আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী এনটিআরসিএ-কে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রণয়ন, নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আইনের ৮ (খ) ধারায় এনটিআরিসএ-র কার্যাবলীর মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নির্বাচনের সুবিধার্থে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ শিক্ষকদের তালিকা প্রণয়ন, নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের কথা বলা আছে।
যোগ্য শিক্ষক নির্বাচনের লক্ষ্যে এনটিআরসিএ-এর আওতায় “বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা-২০০৬” প্রণয়ন করা হয়। যা ২০১২ ও ২০১৫ সালে সংশোধন করা হয়। ২০০৬ সালের বিধি অনুযায়ী নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিল শতকরা ৪০ (চল্লিশ)। পাস নম্বরের ভিত্তিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্রের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ প্রদান করত। প্রার্থীগণ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী যে বিষয়ে নিবন্ধন ও প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ করতে উচ্ছুক সে বিষয়ে নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর ভিত্তিতে উক্ত প্রার্থীকে প্রার্থিত পদের জন্য প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়। ২০১৫ সালের সংশোধিত বিধিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০ (চল্লিশ) রাখা হলেও শিক্ষকের শূন্য পদের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষা বিধিমালার আওতায় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১৭টি নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় এবং প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা হয়।
২। প্রত্যয়ন পত্রের মেয়াদ:-
পরীক্ষা বিধিমালার ২০১৫ সালের সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী প্রত্যয়ন পত্রের মেয়াদ ০৩ (তিন) বছর নির্ধারণ করা হয়।
৩। নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব প্রদান:-
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রি: তারিখের একটি পরিপত্রের মাধ্যমে এনটিআরসিএ-কে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রথম প্রবেশ পর্যায়ের নিয়োগযোগ্য শূন্যপদে নিয়োগ সুপারিশ প্রদানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। উক্ত পরিপত্র অনুযায়ী এনটিআরসিএ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে শূন্য পদের চাহিদা গ্রহণ করে নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করবে। নিবন্ধন পরীক্ষার পর পদ/বিষয় ভিত্তিক জাতীয়-বিভাগ-জেলা-উপজেলাওয়ারী মেধাক্রম প্রণয়ন করে ফলাফল ঘোষনা করবে। অত:পর শূন্য পদের তালিকার ভিত্তিতে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করে প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে মেধা ও চাহিদার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন পূর্বক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দিবে। এনটিআরসিএ-র মাধ্যমে নির্বাচিত প্রার্থীকে গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ প্রদান করবে। উক্ত পরিপত্রে কর্মরত শিক্ষকদের এবং ইত:পূর্বে যারা নিবন্ধিত হয়েছেন তাদেরকেও মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উক্ত পরিপত্রে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রার্থী নির্বাচনের সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলার মেধা তালিকা অগ্রাধিকার পাবে মর্মে এবং উপজেলায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে জেলা মেধা তালিকা এবং তাও পাওয়া না গেলে বিভাগীয় মেধা তালিকা অগ্রাধিকার দেয়া হবে মর্মে নির্দেশনা ছিল। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ২০১৬ সাল থেকে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ করে। এ পর্যন্ত সুপারিশকৃত শিক্ষকগণের পরিসংখ্যান নিম্নে প্রদান করা হলো:
ক্রমিক নং | নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি | মোট সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা |
১. | ১ম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি | ১৩,৬৬৭ জন |
২. | ২য় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি | ৩১,৬৬৫ জন |
৩. | ৩য় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি | ৩৫,১২৭ জন |
৪. | বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি | ৩,৮৪৪ জন |
৫. | সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) | ১,২২২ জন |
৬. | ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি | ২৭,৮৪৬ জন |
৭. | ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি | ২২,০২১ জন |
মোট= | ১,৩৫,৩৯২ জন |
৪। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষকের পদে আবেদন করার বয়স:-
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) বছর।
৫। নিয়োগ সুপারিশ পদ্ধতি:-
(ক) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩০/১২/২০১৫ খ্রি: তারিখের পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুন্য পদের চাহিদা আনার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রথমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা হয়;
(খ) এনটিআরসিএ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রতিষ্ঠান সমূহ থেকে শূন্যপদের চাহিদা (e-requisition) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়;
(গ) শূন্যপদের e-requisition প্রাপ্তির পর এনটিআরসিএ নিয়োগ সুপারিশের জন্য গনবিজ্ঞপ্তি জারি করে এবং অনলাইন আবেদন (e-application) গ্রহণ করে;
(ঘ) ১ম থেকে ৩য় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে প্রতি প্রতিষ্ঠানে চয়েস দেয়ার জন্য আলাদা আলাদা আবেদন করতে হত এবং আলাদাভাবে ১০০ (একশত) টাকা করে ফি প্রদান করতে হত। ২৭/০৭/২০২২ খ্রি: তারিখে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠিত একটি সভায় এক আবেদনে ৪০ (চল্লিশ) টি প্রতিষ্ঠানের পছন্দ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় এবং ৪০ টি আবেদনের জন্য ১০০০ (এক হাজার ) টাকা ফি নির্ধারণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া ৪০ টি পছন্দ অনুযায়ী নির্বাচিত না হলে বাংলাদেশের যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদে মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত করার অপশন রাখা হয়। চতুর্থ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
(ঙ) নিবন্ধিত প্রার্থীদের নিকট থেকে শূন্য পদের বিপরীতে অনলাইনে আবেদন প্রাপ্তির পর নিবন্ধন পরীক্ষার ঐচ্ছিক (লিখিত) বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রতিটি পদের বিপরীতে মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। প্রার্থী নির্বাচনের পর তা প্রার্থী এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশন অন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে প্রার্থীকে একটি নিয়োগ সুপারিশ পত্র প্রদান করা হয়। নিয়োগ সুপারিশ পত্রের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ প্রদান করে।